লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতার নেতৃত্বে তিনতলা ভবন দখল করে ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবীর ঘটনায় ৪১ জনকে গ্রেফতার করে ভবনটি দখল মুক্ত করেছে সদর থানা পুলিশ।
আজ বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) দুপুরে তাদেরকে লক্ষ্মীপুর আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদের লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মধ্য বাঞ্চানগর এলাকার ওই ভবন থেকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত আনোয়ার রায়পুর উপজেলা বামনী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি মেসার্স আনোয়ার ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী। গ্রেফতারকৃত অন্যরা হচ্ছে- তামিম হোসেন, লিটন হোসেন, ফরহাদ হোসেন, মোহাম্মদ মামুন, বেল্লাল হোসেন, মানিক হোসেন, আব্দুল আজিজ রাব্বিসহ ৪০ জন।
ভবনটির মালিক লক্ষ্মীপুর বাজারের ব্যবসায়ী মাইনউদ্দিন অভিযোগ করে জানান, জেলার রায়পুর উপজেলার বামনি গ্রামের আবুল কালামের ছেলে আনোয়ার হোসেনের সাথে কয়েক মাস পূর্বে রায়পুর লক্ষ্মীপুর প্রধান সড়ক বাঞ্চানগর মৌজায় ১২ শতাংশ জমিসহ সেন্ট মার্টিন নামীয় তিন তলা চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ভবনটি বিক্রির আনরেজিস্টার্ড চুক্তি হয়। ৩ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা জমি ও ভবনটির দাম নির্ধারিত হয়। এরমধ্যে ২৮ লাখ টাকা অগ্রিম গ্রহণ করেন ব্যবসায়ী মাইনউদ্দিন।
জমির মালিক মাঈন উদ্দিন জানিয়েছেন, গতকাল ২৬ মার্চ সকাল সাড়ে ১০ টায় লক্ষ্মীপুর পৌর বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক লোকমান হোসেনের নেতৃত্বে আনোয়ার হোসেন, রিয়াজ, ইউসুফসহ অর্ধ শতাধীক সন্ত্রাসী বেআইনীভাবে জনতাবদ্ধ হয়ে উক্ত ভবনের দারোয়ান ও কর্মচারীদের কে মারধর করে বের করে দিয়ে ভবনটি দখল করে নেয় এবং এক কোটি টাকা চাঁদা দাবী করে। তার মালিকীয় ১৩টি বালু ভর্তি ট্রাক দিয়ে ভবনের সামনের খালি জায়গাটাও দখল করে রাখে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, এ ঘটনায় তিনি মধ্যরাত ২টা ২০ মিনিটে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৪০/৫০ জনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার পর ২৭ তারিখ ভোরে অভিযান চালিয়ে বাড়িটি থেকে ৩৬ জন পুরুষ ও ৫ জন নারীসহ ৪১ জনকে গ্রেফতার করে এবং ভবনটি দখলমুক্ত করে। বর্তমানে ভবনটিতে পুলিশ পাহারা রয়েছে।
মাঈন উদ্দিন আরও জানিয়েছেন, তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ওই জমির কাগজপত্র জমা দিয়ে ৯ কোটি টাকা ঋণ নেয়। ধার-দেনায় পড়ে তিনি জমিটি বিক্রির জন্য আনোয়ারের সঙ্গে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা মূল্য নির্ধারণ করে। এতে ২৮ লাখ টাকা দিয়ে একটি নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে বায়না চুক্তি করা হয়।
ব্যাংকের জটিলতা শেষ করে আনোয়ারকে জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ব্যাংকের সমস্যা সমাধান হয়নি। এর মধ্যেই জমিটি দখলে নিতে আনোয়ার অবৈধভাবে পাঁয়তারা করে আসছিল। জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে বায়না হলেও তা রেজিস্ট্রি ছিল না। বায়নার সময় ২৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। পরে মাঈন উদ্দিন লভ্যাংশ হিসেবে টাকা ফেরত দিতে চাইলে আনোয়ার নেয়নি।
মাঈন উদ্দিন আরও বলেছেন, অবৈধভাবে ভাড়াটে ক্যাডারদের এনে আনোয়ার আমার সম্পত্তি দখল করেছেন। আমার ভবনে সেন্ট মার্টিনের সাইনবোর্ড ছিল, তিনি তা সরিয়ে নিজের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে।
দখলের পর গ্রেফতারের আগে আনোয়ার হোসেন বলেন, ৯ মাস আগে ২৮ লাখ টাকা দিয়ে জমি কেনার জন্য মাঈন উদ্দিনের সঙ্গে নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে বায়না করেছি। চুক্তি অনুযায়ী তিনি আমাকে ভবনসহ জমি বুঝিয়ে দেয়ার কথা ছিল। প্রায় ৪ কোটি টাকা আমার ব্যাংকে পড়ে আছে। তা আমি উত্তোলন করতে পারছি না। চুক্তির ভিত্তিতেই আমি ভবনসহ জমি দখল করেছি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার বহিরাগত লোকজন নিয়ে শহরের মধ্য বাঞ্চানগর এলাকায় সেন্ট মার্টিন কমিউনিটি সেন্টারের ভবনটি দখল করেন। এসময় তাদের সাইনবোর্ড খুলে মেসার্স আনোয়ার ট্রেডার্স লেখা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন তারা। পরে ভবনের সামনে ১০টি ট্রাক ও ড্রাম্প ট্রাক রেখে সামনের অংশ দখল করে রাখে। রাতেই ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মো. মাঈন উদ্দিন বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় আনোয়ারসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৪৯ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আক্তার হোসেন জানান, থানায় মামলা দায়েরের পর ভবনটি দখল মুক্ত করা হয়েছে । এবং ভবনে থাকা ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে । মামলাটি তদন্তাধীন আছে । ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
লক্ষ্মীপুরখবর//এএইচ